স্বদেশ ডেস্ক:
নিজ দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশের মাটিতে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করতে পারাটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। আর তারই স্বাদ পেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সঙ্গে ভারত সফরের মাধ্যমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ (ডিইউআরএস) একটি টিএসসিভিত্তিক সংগঠন। এর উদ্দেশ্য হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তোলা। সংগঠনটি এ বিষয়ে তাঁদের নানা সহায়তা প্রদানও করে থাকে। আয়োজন করে নিয়মিত সভা ও কর্মশালা। এরই ধারাবাহিকতা ছিল এবারের ভারত সফর। ২০ জন গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থী গিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। যার অংশ হিসেবে ছিলাম আমিও।
প্রস্তুতি চলছিল বেশ আগে থেকেই। যাত্রা শুরুর আগেই বেশ একটা উৎসবমুখর ভাব এসে গিয়েছিল সবার মধ্যে। আর গত ৩ সেপ্টেম্বর যখন কলকাতায় প্রবেশ করি, তখন এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি ঘিরে ধরে পুরো দলকে। আমাদের হাতে ছিল তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া আমন্ত্রণপত্র। আয়োজকদের নির্ধারিত সল্টলেক স্টেডিয়ামসংলগ্ন নবপ্রজন্ম যুব আবাসে উঠি আমরা। প্রথম দিন আশপাশেই ঘুরে দেখলাম।
পরদিন ভোরে শালিমার স্টেশন থেকে ট্রেন ধরি মেদিনীপুরের। গন্তব্য বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। আড়াই ঘণ্টা ট্রেনে গ্রামবাংলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছাই মেদিনীপুর। সেখানে দিনব্যাপী আয়োজন হয় সম্প্রীতি সংলাপ। সেমিনারটিতে দুই দেশের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভাবনা প্রকাশ করেন নানা বিষয়ে। আয়োজনটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী।
পরের দুই দিন আমরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াই কলকাতা শহরের বিভিন্ন আকর্ষণীয় আর শিক্ষণীয় স্থানে। যার মধ্যে রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলেজ স্ট্রিট, বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রিটের দ্য ইন্ডিয়ান কফি হাউস। গবেষণাপত্রের কিছু কাজও শেষ করি এই দুই দিনে।
৭ সেপ্টেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল কনফারেন্সে অংশ নিই আমরা। এটির আয়োজক ছিল বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ। দিনব্যাপী চলা এই কনফারেন্সটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ১০০ বছর’। সেখানে মোট সাতটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করি আমরা ২০ জন। গবেষণাপত্রগুলোর বিষয়গুলোও ছিল বেশ কৌতূহলোদ্দীপক: দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতি, সমাজ, তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি, রোহিঙ্গা সমস্যা ইত্যাদি।
৯ সেপ্টেম্বর উপস্থিত হই আসানসোলে। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সোসাইটি ইন সাউথ ইস্ট এশিয়া’ শীর্ষক সম্মেলনে দুই দেশের তরুণেরাই নিজেদের অনুভূতি, ভাবনা প্রকাশ করেন। বক্তব্য দেন গণতন্ত্র এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ ব্যবস্থা নিয়েও।
এসব সেমিনারের বাইরেও ঘোরাফেরা আর খাওয়াদাওয়া হয়েছে প্রচুর। বোলপুরের শান্তিনিকেতন আর সোনাঝুরি হাট ঘোরার অভিজ্ঞতাটাকে ‘স্পেশাল’ না বললে ভুল হবে। কলেজজীবন থেকেই কিশোর আলোর সঙ্গে কাজ করি আমি। সেই সূত্রে পরিচয় হয় বিভিন্ন বয়সের নানা ছেলেমেয়ের সঙ্গে। প্রিয়ন্তী বাঁধনের সঙ্গে কিশোর আলো সভায় পরিচয়। বর্তমানে বিশ্বভারতীতে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে সে। প্রিয়ন্তী আমাদের পুরো দলটিকে ঘুরিয়ে দেখায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়; তার সঙ্গে আলাপ হয় সেখানকার পড়াশোনার চমৎকার পরিবেশ নিয়েও।
ঘোরাঘুরি এমনিতেই বেশ আনন্দের ব্যাপার। আর তা যদি হয় গবেষণাসূত্রে, তবে একটা ভিন্ন মাত্রা আসবে, সে কথা বলাই বাহুল্য!